রানী বয়স বায়ান্ন এর কোটায়। চারপাশে রঙিন জীবন দেখেছেন, সেই জীবনকে স্পর্শ করার স্বপ্ন দেখাই ছিল যেন দু:সাহস। ছিন্নমূল জীবনে কিভাবে দু’মুঠো অন্নাহার করে রৌদ, বৃষ্টি, ঝড় থেকে বেঁচে থাকার যুদ্ধে এক পুত্র সন্তান নিয়ে টিকে থাকবেন তা ভেবেই হয়ে যেতেন দিশেহারা।
রাস্তার পাশে তালপাতার ছাউনির একটি ঝুপড়ি ঘরে সন্তান নিয়ে বসবাস ছিলো রানীর। এরপর বস্তির মতো একটি ভাড়া বাসায় দিনমজুর সন্তানের টাকা দিয়ে টানাপোড়েনের মধ্যদিয়েও চলেছে তাদের সংসার। অর্থের অভাবে সন্তান কে স্কুলেও পাঠাতে পারেননি। এতটাই কঠিন দু:সহ জীবন ছিল তার। স্থায়ী মাথা গেঁাজার ঠায় কখনও পাবেন এমনটা স্বপ্নেও কল্পনা করেননি তিনি।
জীবন যে কখনো কখনো কল্পনাকে হার মানায়, তেমনই স্মরনীয় একটি দিন এলো রানী এর জীবনে। ২০২৩ সালে মুজিব বর্ষ উপলক্ষে আশ্রয়ন প্রকল্পে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া ২ শতক জমির উপর নির্মিত সেমি-পাকা ঘর পেলেন অমূল্য উপহার হিসেবে। যে জমিরই মূল্য কমপক্ষে পাঁচ লক্ষ টাকা, যা ক্রয়ের সাধ্য তার কখনোই ছিল না। চোখে তার নতুন স্বপ্ন, মনে খুশির জোয়ার। জীবনে অনেক কেঁদেছেন, এই প্রথম আনন্দে অশ্রু নামল তার দু’চোখ বেয়ে।
সরেজমিনে যেয়ে দেখা যায়, বিভিন্ন জায়গা থেকে এক হওয়া ৭৫টি পরিবার যেন একে অপরের আত্মার-আত্মীয় হয়ে গেছেন। গড়ে উঠেছে তাদের মধ্যে বেশ সখ্যতা। এছাড়া প্রতিটি ঘরের নারীরা পালন করছেন হঁাস-মুরগী। পাশাপাশি বাড়ির আঙিনায় মাচা করে বিভিন্ন ধরনের শাকসবজি লাগিয়েছেন। দুই একজন গরু-ছাগলও পালন করছেন।
দীর্ঘ বছর যাবত এখানে সেখানে খুব কষ্টে বসবাস ছিলো তাদের। সন্তান এর উপার্জিত অর্থের অভবে বাসা ভাড়ার টাকা দিতে পারতাম না কোন কোন মাসে। প্রধানমন্ত্রী আমাদের বাড়ি দিয়েছেন, মাথা গোঁজার ঠাই পেয়েছি। এখন আমরা আগের চেয়ে খুব ভালো আছি।
সুড়ঙ্গের শেষে যে আলো থাকে, তা যে কত দীপ্তিময় হয়ে উঠে তা বোঝা যায় রানী’র বদলে যাওয়া সময় দেখে। তার সন্তান ঝুড়ি, ডালা ও খাঁচা তৈরি করেন এবং সেগুলো বাজারে বিক্রি করেন। রানী সংসারের কাজের পাশাপাশি সন্তান কাজে করেন সর্বাত্মক সহযোগিতা। সন্তান আয় নিজের কাজকর্মে যে রোজগার হয় তাতে চুকে গেছে তাদের অভাব অনাটন। সন্তান পড়াশোনা করছে পাশের স্কুলে। স্বচ্ছল ও নিরাপদ জীবন চলার পথ সুগম করার জন্য তিনি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন প্রধানমন্ত্রীর প্রতি এবং তাঁর দীর্ঘায়ুর জন্য প্রার্থনা করেন। দু:স্বপ্ন, পরনির্ভরশীলতা রানী হয়ে উঠেছেন একজন স্বনির্ভর, আত্মবিশ্বাসী ও সুখী মানুষ।
পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নে: মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ, এটুআই, বিসিসি, ডিওআইসিটি ও বেসিস